সম্পাদকের কলমে
বর্ষার দেখা নেই দাবদাহে কাঁপে ধরা—
সবুজায়নের নেশা অবনী হরিৎ ছাড়া।
নিষ্প্রাণ পশু পাখি পথে-ঘাটে ছড়ানো
তৃষ্ণায় ছাতি ফাটে নদী নালা শুকনো।
বছরের শুরু থেকে অঘটনে দেশ ডুবে
বিনা দোষে কি কারণে, মানুষের প্রাণ যাবে!
ওই শোনা যাচ্ছে যুদ্ধের দামামা
লাগলো যুদ্ধ বুঝি, কি হবে তা জানি না!
পরমাণু যুদ্ধের মহড়া চলছে বুঝি
ভুলে হানাহানি, এসো শান্তির পথ খুঁজি।"-
বর্ষা আসবে-আসবে করেও যেন আসছে না। তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাণীকুল জর্জরিত।
পথেঘাটে প্রতিনিয়ত পশুপাখির শব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্রমাগত গাছ কেটে
নিত্যনতুন নগরায়ন, পথঘাট নির্মাণের ফল এটা। পৃথিবীতে পানীয় জলের স্তর
ক্রমাগত কমে চলেছে, আগামী দিনে কি যে হবে সেই কথা ভেবেই শিউরে উঠছে মন!
এই বছর শুরুর থেকে এখনো পর্যন্ত একটার পর একটা দুর্ঘটনায় আমরা দেশবাসীরা
ভীষণভাবে মর্মাহত।
প্রথমেই কুম্ভ মেলা কে কেন্দ্র করে পরপর দুটো অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার
সংবাদ! প্রথমটি প্রয়াগ গঙ্গা ঘাটে এবং দ্বিতীয়টি নিউ দিল্লি স্টেশনে।
আমরা বোধহয় মিথ্যেই ভাইচারার দোহাই দিই! আসলেই আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে
একটা একটা ধর্মান্ধ বর্বরতা বাস করে। তাইতো ওয়াক্ফ বিলকে কেন্দ্র করে
হয়ে যায় ধর্মীয় দাঙ্গা।
এরপর সেই ধর্মের নামে আবারো বর্বরতা নিষ্ঠুরতা পরিলক্ষিত হয় কাশ্মীরের
পেহেলগাঁওতে। সেটা তো আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের
একটা পরিকাঠামো তৈরি হয়।
এরপর আহমেদাবাদের ভীষণ দুঃখজনক বিমান দুর্ঘটনা, যেখানে প্রায় 270 জন
মানুষ প্রাণ হারান।
আর বর্তমানে সারা বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দোলা চলে দুলে চলেছে।
প্রতিমুহূর্তে মনের ভেতরের যুদ্ধের ভেরি বেজে উঠবো বেজে উঠবো করছে। মনে
ভয়, এই বুঝি শুরু হয়ে গেল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!
আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের উপর আমেরিকার
পরমাণু বোমার হামলা আমরা কেউই বোধহয় বিস্মৃত হইনি! একটি দেশের ওপর
পরমাণবিক হামলায় কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয় তা বোধ হয় জাপানকে না দেখলে
চিন্তা করা যায় না! যদিও বর্তমান সময় তারা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সারা বিশ্ব এখন পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে, এতে করে কে
যে মরবে আর কে যে বাঁচবে তার হিসেব রাখা খুবই মুশকিল!
বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এবং জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি আমাদের
শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। ঈশ্বর
তাঁদেরকে শোক ভুলে নতুন করে বাঁচার শক্তি যোগান- এই প্রার্থনাই করি।
আমরা আশাবাদী, তাই আশা রাখব আগামী দিনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাতাবরণ কেটে
গিয়ে বিশ্বের সামগ্রিক কুশল এবং মঙ্গল হোক। জাতিতে- জাতিতে, ধর্মে-
ধর্মে হানাহানি যুদ্ধ বন্ধ হোক এবার। যারা হারায় তারা জানে কি
হারিয়েছে! যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারাই জানে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!
তাই সাময়িক পরিস্থিতির কারণে একে অপরের শত্রুতা না করে, যুদ্ধ না করে,
আমরা শান্তির পথ, ভালোবাসার পথ, বেছে নিতেই পারি। তাতেই আমাদের সামগ্রিক
উন্নতি সিদ্ধ হবে।
সবাইকে আগামী রথযাত্রা, রাখি বন্ধন, জন্মাষ্টমী এবং সর্বোপরি স্বাধীনতা
দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই । সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ
থাকুন।
নমস্কারান্তে —
অনিন্দিতা গুড়িয়া,
সম্পাদক, নিউ-দিল্লি
প্রসেনজিৎ দাস,
সহ-সম্পাদক, পশ্চিম মেদিনীপুর
বর্ণে বর্ণে- বাংলা ই পত্রিকা ২য় বৎসর, ২য় সংখ্যা
চিরসবুজ, ১৪৩২/ জুন, ২০২৫