তানিমের নববর্ষ
সুস্মিতা ভান্ডারী কর,
পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর
গাড়ি গ্রামের মেঠোপথে ঢুকে পড়েছে। চারপাশে গাছগাছালি আর মাঠজুড়ে বাদাম
ডাল আর তিলের সমারোহ। এগুলো দেখে তানিম আনন্দে আত্মহারা। এই প্রথম তানিম
গ্রামে যাচ্ছে। তার বয়স আট বছর। ঢাকা শহরের গাড়ি বাড়িতেই বসবাস ছিল
তার। তাই সবুজের বুকে ঢুকে পড়ে তানিম উৎফুল্ল। গাড়ি থামল। তানিমের
চাচাত ভাই-বোনেরা এসে তাকে ঘিরে ধরল। তারা তাকে আর ঘরেই ঢুকতে দিল না।
নিয়ে গেল মাঠের দিকে। সেখানে মেলা হচ্ছে। ঘোড়ার দৌড়, ভুতের সাজ এসব
দেখে তো তানিম অবাক। সেই সঙ্গে বাতাসা, জিলাপি, ডাব, তরমুজ ও হরেক রকম
জিনিস দেখে লোভ সামলাতে পারল না তানিম। সে কিনে নিয়ে সবাইকে দিল, নিজেও
খেল। সে তার চাচাত ভাই রাকিবকে জিজ্ঞাসা করে, কিরে আজ এখানে কি হচ্ছে?
রাকিব চমকে ওঠে, কী? জানিস না! আজ নববর্ষ। বছরের প্রথম দিন। তানিম হেসে
উঠল। তুমি পাগল নাকি? ওটা তো হয়ে গেছে জানুয়ারি মাসে। তারেক বুঝতে পারল
যে, ও তো শহরে থাকে। তাই এসবের কী জানে। সে তাকে আস্তে আস্তে বুঝাতে
লাগল। শোন তানিম আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের একটা বছর আছে। তার শুরু হয়
বৈশাখে। এর নাম নববর্ষ। জানুয়ারি হচ্ছে ইংরেজি মাস, ওটা আমাদের কিছুই
নয়। আমরা বাঙালি। দেখছ আমাদের কত সুন্দর উৎসব হয়। এখানে কত মজা হবে জান
তুমি? তানিমের ছোট্ট মনে সারা দিলো আজ আমরা সব এক সব ধর্মের ভেদাভেদ
ভুলে। তারপর সেও তারেকের সঙ্গে নববর্ষে মেতে উঠল। বিকালে যখন তানিম বাড়ি
গেল তাকে দেখে তো মা রেগে আগুন। সারা গায়ে ঘাম। জামা প্যান্টে ময়লা।
এসব দেখে তার সঙ্গে কথাও বলে না তার মা। তানিম চালাকি করে তার মাকে পেছন
দিয়ে গিয়ে ধরে ফেলে। আর বলে মা আমি তোমাকে একটা মজার কথা শোনাব যদি
তুমি তোমার রাগ কমাও।
মা হেসে বলল, বল বল। 'আমি গ্রামে থেকে যাব, শহরে যাব না। ওখানে নববর্ষ
নেই।' কী? আঁৎকে ওঠে মা। আর মনে মনে চিন্তা করে সত্যিই গ্রামের এই সুন্দর
পরিবেশ কোথা থেকে এনে দেবে তানিমকে।
