মূলো বেগুনের দ্বন্দ্ব
সুলেখা ভান্ডারী,
বালিগঞ্জ, কলকাতা
শোনো শোনো শোনো ভাই শোনো দিয়া মন
আজব এক গল্প আমি শোনাবো এখন।
হঠাৎ দেখি বাজারেতে মহা ধুন্ধুমার কান্ড
মূলো বেগুনের মধ্যে লেগেছে প্রচন্ড এক দ্বন্দ্ব।
হায় হায় হায় এ কি শুনি মাথায় পড়লো বাজ,
কি কারণে করছো ঝগড়া বলবে বাপু আজ!
বেগুন বলে মূলোরে, আমার কত গুণ জানিস?
মূলো বলে বল দেখি তোর একটা গুণ শুনি।।
বেগুন বলে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো ভাই,
কাজ বাড়ি, পুজো বাড়ি, শ্রাদ্ধ বাড়ি,
প্রথম পাতে খুঁজবে আমায় সবাই।
শুক্ততে আমায় দিলে পাবে কতো যে স্বাদ......
আরে থাম থাম, তুই একাই করবি নাকি বাজিমাত!
মূলো বলে দেখবি নাকি আমার কত গুণ?
বেগুন বলে বল দেখি তোর আছে এমন কি গুন,
ডালের সাথে মূলো ভাজা আঃ কি মজা।
মূলোর টক, মুলোর ডালনা, মুলোর পরোঠা -
একটু খানি চেখে দেখে যা, ভালো হবে তোর মনটা।
বেগুন বলে বর্ষা কালে খিচুড়ির সাথে আমায় চাই চাই।
বাড়িতে যখন জমবে আসর, বলবে সবাই -
মুড়ির সাথে চপ বেগুনি থাকে যেন ভাই।
মূলো বলে বড়ি দিয়ে আমার ছেঁচকি যদি রাঁধে
ছেলে বুড়ো সবাই খাবে বোঝার উপায় কি আছে!
বেগুন বলে কতো জাতের আছি আমি জানিস?
কাঁটা বেগুন, সাদা বেগুন, ছিটে বেগুন,
বেগুনি বেগুন, নুড়কি বেগুন আরোও কত কি।
মূলো বলে আমারও যে কত রূপ আছে তুই কি তা জানিস?
সাদা মূলো, লাল মূলো, পৌষে মুলো বলেও আমায় ডাকে লোকে।
অগ্রহায়ণ আর পৌষ মাসে সবাই আমায় পুজোতে তো দেয়।
আমায় নিয়ে প্রসাদ বলে সবাই কিন্তু খায়।
বেগুন বলে শীত কালে যদি বেগুন পোড়া হয়,
দু চারটে রুটি বেশি করো আজ ছেলে পুলেরা কয়।
কালো জিরে কাঁচা লঙ্কা ইলিশ মাছে বেগুন,
তুলনা হয়না সেই স্বাদের ট্যাংরা বড়ি বেগুন ।
মূলো বলে বেগুন রে ভাই আছে কি তোর গুণ?
পোকা তোকে খুলে খায়, কারোর আবার এলার্জি হয় ।
বেগুন বলে মূলো রে তুই মুখ খুলাসনা আমার।
তোকে খেলে হয় যে রে ভাই গ্যসেরই ভাণ্ডার।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ তা লোকের কাছে বলার মত না।
পাড়ার মোড়ে চায়ের সাথে আড্ডাতেও আছি,
আবার পোকা বেগুন ও কেটে কুটে চচ্চড়িতে ভারী মজি ।
মুলো বলে বিশ্বকর্মার বাহন হাতির মুলোর মত দাঁত।
বেগুন বলে হাতিকেই মানায়, লোককে গিয়ে বলিস-
"আমার মুলোর মতো দাঁত"। দেখবি লোকে খিল্লি করবে তোর।
এক এক সময় বাজারেতে আমার কত দর।
কেজিতে আমি ১৫০ কিংবা ২০০ টাকাও হই।
সারা বছর আমার ডিমান্ড তোর পাত্তা কই?
১২ মাসই বাজারেতে আমার দেখা মেলে।
মূলো রে তুই শুধুই শীতে ঘুরতে আসিস বাজারেতে।
অন্য সময় তোকে তেমন দেখা মেলে না যে।
মূলো বলে জন্ডিস হলে লোকে আমায় খোঁজে,
কচিপাতা মিষ্টি দিয়ে ভাজা খেতে মন্দ লাগে না যে।
বেগুন বলে মূলো রে তোর বাজারে দাম কত?
মেরে কেটে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো।
বেগুন বলে পৌষ মাসের পরে তোকে খায় না অনেকে,
সারা বছর লোকে কিন্তু আমায় বাড়িতে ডাকে।
মূলো বলে আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে আমার,
এবার বাবা ছেড়ে দে না আমায় ধরিসনাকো আর।
পাশের থেকে কেউ বললে, হাত থাকতে মুখ কেন
যেমনই শোনা মূলো বেগুনের হাতাহাতিতে বাজার তোলপাড় যেনো।
মূলো ভেঙে দুখান হলো, বেগুনের পেট ফাটা
সারা বাজারে হুলস্থুল অবস্হা যা তা।
দেখে শুনে সবকিছু চুপ থাকতে পারিনা আর
চেঁচিয়ে বলি থামো দুজনে, হাত মেলাও এবার।
হলো অনেক দামি বেগুনের সাথে কম দামি মূলোর দোস্তি
দুজনে মিলে শুক্তর কড়াইয়ে করে দাও মাত কিস্তি।
মূলো বেগুন উভয়ের দ্বন্দ্ব ঘুচে গেলো।
সবাই মিলে মূলো বেগুনের জয়-ধ্বনি তোলো।।
