মায়ের আঁচল

সুলেখা ভান্ডারী,

কসবা, বালিগঞ্জ

মায়ের আঁচল হল শান্তির আশ্রয়, মায়ের আঁচল পবিত্র, মায়ের আঁচলে থাকে মিষ্টি গন্ধ। আমরা যখন ছোট ছিলাম কত বমি করেছি মায়ের কোলে। মা কিন্তু ঘৃণা করেনি, নিজের আঁচল দিয়ে সস্নেহে মুছে দিয়েছে কতবার।

ছোটবেলায় কেউ যদি ভয় দেখায়, ছুটে গিয়ে মায়ের আঁচলের তলায় নিরাপদ আশ্রয় পেতাম। মায়ের আঁচল হল এমন।

সারাদিনের সমস্ত কাজকর্ম সেরে সবার শেষে মা খাচ্ছে, এমন সময় ঘুমন্ত শিশু সন্তান যদি জেগে যায় তখন মা তাকে কোলে নিয়েই খেতে বসে। এমন কত হয় যে, মা খাচ্ছে আর আমরা মায়ের কোলে পায়খানা করে দিতাম। কিন্তু মা ঘৃণা না করে আঁচল চাপা দিয়ে শিশুকে পুরো পেট পুরস্কার করে পায়খানা করতে দিত। আবার সেই অবস্থায় বসে নিজে ভাত ও খেয়ে নিতো। কি করবে? কাজের ব্যস্ততা এত যে পরে খাওয়ার সময় কোথায়!

মায়ের আঁচল হল ব্যাংক বা সিন্দুক বলতে পারো, তাই নয় কি! যখন আমরা কোন কিছুর জন্য বায়না করতাম, তখন সবসময় আঁচলের খুঁটে বাধা পয়সা মা আঁচলের খোঁট খুলে দিয়েও দিতো।

মায়ের আঁচল হল এমন, তুমি কোথাও পড়ে গিয়েছো, কাদামাটি লেগেছে, মা দেখতে পেয়ে বলতো- আহারে বাছা আমার পড়ে গিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে আঁচল দিয়ে মুছে দিত। মা কিন্তু তখন ভাবেনা তার শাড়িতে কাদামাটি লেগে গেল।

কোথাও হয়তো পুজো হচ্ছে, সেখানে তুমি যাওনি, মা গেছেন। মা কিন্তু তার আঁচলে করে তোমার জন্য ঠাকুরের আরতির তাপ, আম পাতায় বা কলা পাতায় মুড়ে হোমের টিকা, পুজোর প্রসাদ ওই আঁচলে বেঁধে নিয়ে আসেন।

মায়ের আঁচল হল নির্মল, স্বচ্ছ, কোমল, সুন্দর এবং নিরাপদ। তোমার যদি জ্বর হয়, মা তার আঁচল ভিজিয়ে কপালে জলপট্টি দিয়ে ঘুম নিদ্রা ত্যাগ করে সারারাত জেগে জ্বর কমিয়ে দেবে।

ছোটাছুটি করতে গিয়ে হয়তো পড়ে গেছো, রক্ত ঝরছে, মা ছুটে গিয়ে হাতের কাছে কোন কিছু না পেয়ে নিজের আঁচল ছিঁড়ে বেঁধে দিতো।

মায়ের আঁচল হল এমন পবিত্র, তুমি কোথাও ভালো কাজে যাচ্ছ- মা তার আঁচলে দেবতাদের পায়ের ধুলো নিয়ে তোমার মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বলবে- তোমার মঙ্গল হোক, দুগ্গা দুগ্গা।

তোমার মন অশান্ত, কোন কিছু ভাল লাগছে না, মায়ের আঁচল তলে একটু শুয়ে পড়ো, দেখবে কি শান্তি! কি শীতল! সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যাবে নিমিষেই! মনে একটা আলাদা শান্তির অনুভূতি পাবে।

ছোটবেলায় মা তাদের সন্তানদের যখন বুকের দুধ খাওয়াতো, হয়তো বাসে বা ট্রেনে যাচ্ছে, আবার অনেক সময় বাড়িতে লোকজনের মাঝে দুধ দিতে হতো, তখন মা তার আঁচল দিয়ে ঢেকে দিতো।

শীতের ঠান্ডায় তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছ, তোমার কাছে নেই কোন চাদর বা সোয়েটার। তাতে কি হয়েছে, মায়ের আঁচল আছে তো! মা তার আঁচল দিয়ে ঢেকে নেবে। তখন মনে হবে সব ঠান্ডা দূর হয়ে গেছে।

মায়ের আঁচল হল এমন জায়গা, হয়তো কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। জোরে জোরে বাজ পড়ছে। ভয়ে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে নাও, দেখবে সব ভয় দূর হয়ে যাবে।

মা হলো মায়া, মা হলো মমতা, মা হল গর্ভধারিণী, মা হলো স্নেহময়ী, মা হল করুণাময়ী, মা হলো জননী, মা হলো জন্ম দাত্রী।

পৃথিবীতে সবাই যদি তোমাকে ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করে, মা কিন্তু তার অন্ধ, কানা, খোঁড়া, পাগল, চোর- ডাকাত, খুনি ছেলেমেয়েকেও একা ছেড়ে চলে যেতে পারে না। একমাত্র মা-ই পারে তাকে সবার থেকে আঁচলে ঢেকে আগলে রাখতে।

মাগো তোমার আঁচল খানি মাথায় নিয়ে রাখবো মাগো তোমার চরণ তলে সারা জীবন থাকবো। ছোট্ট একটি শব্দ শুনলেই জব্দ। -শব্দটি হল- 'মা, আমার মা' - তাইতো চারণ কবি মুকুন্দ দাস বাঁধলেন গান- "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই দিন দুখিনী মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই। "