গরমে সুস্থ থাকুন সুস্থ রাখুন

বাসবদত্তা গুড়িয়া,

নতুন দিল্লি

দিল্লি চরমভাবাপন্ন স্থান। শীতকালে যেমন ঠান্ডা গ্রীষ্মকালে তেমনি গরম। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দিল্লিতে প্রচন্ড গরম থাকে। সূর্যের তেজ ভয়ংকর আকার ধারণ করে। এই সময় প্রায়শই শোনা যায় প্রচন্ড গরমে লু লেগে বা সান স্ট্রোক হয়ে অনেক মানুষ এবং জন্তু-জানোয়ারেরা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাপপ্রবাহ গ্রীষ্মকালে এক ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে আমাদের মতো গরম অঞ্চলে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিট স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তবে ঠিক মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে এই প্রচন্ড গরম বা দাবদাহ কে এড়িয়ে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। আসুন, তাপপ্রবাহ থেকে নিজেকে ও পরিবারের সকলকে বাঁচাতে নিচের বিস্তারিত পরামর্শগুলো অনুসরণ করি।


🌞 ১. দুপুরে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন

গরমের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে দুপুর ১১টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে। এই সময়ে সূর্যের রশ্মি সবচেয়ে তীব্র থাকে। এই সময় বাইরে গেলে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে, তাই যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন। জরুরি দরকার হলে ছাতা, সানগ্লাস ও জলের বোতল সঙ্গে রাখুন।

💧 ২. প্রচুর জল পান করুন

তাপপ্রবাহের সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক জল বেরিয়ে যায়। শরীর হাইড্রেটেড না থাকলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এমনকি অজ্ঞান হওয়ারও সম্ভবনা থাকে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল খান সঙ্গে -সঙ্গে নারকেল জল, লেবু জল, ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) খাওয়া ও ভালো ।

👕 ৩. হালকা ও ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরুন

গরমে গা ঘেমে ওঠে এবং টাইট জামা পরলে শরীর আরও গরম হয়ে যায়। তাই ঢিলেঢালা, হালকা রঙের ও সুতির কাপড় পরা উচিত। এগুলো শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

🥗 ৪. হালকা খাবার খান

তেল-মশলাদার, অতিরিক্ত গরম ও ভারী খাবার গরমকালে শরীরের গরম আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই বেশি করে ফলমূল (তরমুজ, শশা, পেঁপে), শাকসবজি এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খান। ফ্রিজ থেকে সদ্য বের করা ঠাণ্ডা পানীয় বা আইসক্রিম বেশি খাওয়া উচিত নয়—এতে সর্দি হতে পারে।

🧴 ৫. ঠাণ্ডা রাখতে স্নান করুন বা শরীর মুছুন

দিনে একাধিকবার ঠাণ্ডা জল দিয়ে স্নান করলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। নাহলে একটি ভিজে তোয়ালে দিয়ে গা মুছে নেওয়া যায়, বিশেষ করে গলা, হাত ও মুখে।

🪟 ৬. ঘরের তাপ কমান

বাড়ির জানালা ও দরজা দিনের বেলায় বন্ধ রাখুন যাতে সূর্যের তাপ ভিতরে না ঢোকে। জানালায় হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করুন। সন্ধ্যায় বা রাতে জানালা খুলে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢোকাতে পারেন।

🛑 ৭. অতিরিক্ত কাজ ও শারীরিক পরিশ্রম এড়ান

তাপপ্রবাহ চলাকালীন দৌড়ানো, খেলাধুলা বা ভারী কাজ করা একেবারে নিরাপদ নয়। এতে শরীর অতিরিক্ত গরম হয় ও জল কমে যায়। যতটা সম্ভব শারীরিক পরিশ্রম এড়ান।

📢 ৮. আবহাওয়া সংক্রান্ত খবর রাখুন

স্থানীয় টিভি, রেডিও বা মোবাইলের মাধ্যমে আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তা শুনে রাখুন। সরকার বা স্কুল থেকে যদি কোনো নির্দেশ আসে, তা অবশ্যই মানুন।

❤️ ৯. দুর্বলদের প্রতি সাহায্য করুন

বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, ও রাস্তায় থাকা মানুষদের বিশেষ যত্ন দরকার। তাঁদের প্রয়োজনে ঠাণ্ডা জল, ছায়া ও হালকা খাবার দিন। পোষা প্রাণী ও রাস্তার কুকুর-বিড়াল পাখি পক্ষদের জন্যেও জল ও ছায়ার ব্যবস্থা করুন।

🧊 ১০. কিছু জরুরি লক্ষণ চিনে নিন

• মাথা ঘোরা
• অতিরিক্ত ঘাম
• দুর্বল লাগা
• বমিভাব
• চামড়া গরম ও শুকনো হয়ে যাওয়া

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ঠাণ্ডা স্থানে যান, জল খান এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নিন।

তাপপ্রবাহকে হালকাভাবে নেবেন না। সামান্য সতর্কতা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। নিজের যত্ন নিন এবং আশেপাশের মানুষদেরও সতর্ক করুন।