ফুল - ফুলদল
তমাল আচার্য,
গোরক্ষপুর, উত্তর প্রদেশ
"ফুল কলিরে ফুল কলি
আয় তোকে কিছু বলি"-
সূর্যের ছোঁয়া পেয়ে প্রকৃতির হাওয়ায় হাওয়ায় তুই ফুল হয়ে রূপে রসে
গন্ধে পৃথিবীর মানুষকে মন ভরানো চোখ জুড়ানো আবেশে জড়িয়ে রাখিস শুধু
মানুষকে কেন স্বর্গের দেবতা দেবী যক্ষ দক্ষ কিন্নর গন্ধর্ব মুনি ঋষি
সৃষ্টির সকল প্রাণী তোর মোহময় বাঁধনে বেঁধে আছে তুই কখনো মিষ্টি কখনো
নদীর হাসে লাশে সবাইকে উতল করে রেখেছিস।
চলতে চলতে গলির মোড়ে পথের দুধারে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে তুই বেশ হেসে খেলে
থাকিস। মাটির ঘরে ইঁট পাথরের রকমারি বাড়িতে, বারান্দায়, কার্নিশে, কত
ঢং করে থাকিস। তোর রূপের ছটায় পৃথিবীর মানুষ পাগল পারা। দেবদেবীর পুজো
অর্চনাতে তোকে ভীষণ দরকার হয়। মানুষের মাঝে প্রেম ভালবাসা শ্রদ্ধা আদর
জানাতে তোকে ছাড়া ভাবা যায় না।
তুই এক কিন্তু তুই অ-নে-ক। যারা তোকে নিয়ে কবিতা লেখেন গল্প লেখেন তখন
নানান নামে তোকে তাদের লেখায় লিখে রাখেন। পাতায় পাতায় শুধু তোর রং
জলুসের কথার মালা।
ফুল, তুই নদীর ধারে পুকুর পাড়ে মাঠে প্রান্তরে মানুষের অন্তরে এক মিষ্টি
রূপের সাজে কবি মন লেখক মন তোকে এক অনন্য রূপের সাজিতে সাজিয়ে রাখে মনের
আঙিনায়। কারণে অকারণে মন রাঙিয়ে গেয়ে ওঠে -
"ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বনফুল গো"
আবার কখনো- "বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা"।
বেহিসেবী মন কত নামে তোকে ডাকে তবু যেন মন ভরে না।
ফুল, তুই জানিস, তোর কত নাম? আমি বলছি। অবশ্য যতটুকু জানি ততটুকুই বলছি।
তুই -
অতসী অশোক পলাশ শিমুল আকন্দ কদম করবি কাঁঠালি চাপা কুন্দ কামিনী কেতকী
কেয়া কুমুদ কল্কে কাঞ্চন কৃষ্ণকলি কৃষ্ণচূড়া গাধা, গন্ধরাজ গোলাপ
চন্দ্রমল্লিকা চামেলি চম্পা চম্পা জবা জুই যুথিকা ঝিন্টি টগর দোলনচাঁপা
দোপাটি ধুতুরা নয়ন তারা নাকিশ্বর পারুল পঙ্কজ পদ্ম পারি জাত শত দল কমল
উপেল স্থলপদ্ম কথার বকুল বেলি বন্ধুলি ভাট ফুল ঘেটু মল্লিকা মালতি মন্দার
রঙ্গন রজনীগন্ধা সালুক শাপলা শিউলিশিমুল সিরিজ সূর্যমুখী হাসনুহানা
অপরাজিতা হয়ত আরো তোর নাম আছে মনে পড়ছে না তবে হ্যাঁ ওদের জানি তোদেরই
একজন ওরা, কুমড়ো ফুল ঝিঙে ফুল ডুমুর ফুল বকফুল সজনে ফুল। সোঁদা সোঁদা
মাটির ঘরের মাথায় নিরবে মানুষের জন্য নিজেকে সঁপে দেবার ব্রতে ব্রতী
ওরা।
ডুমুর ফুল, তুই আবার ডুমুরের ভেতরেই থাকিস, এ এক প্রকৃতির অবিশ্বাস্য
সৃষ্টি।
ফুল, সেই আদিকাল থেকে মহাকবি বিশ্বকবি কবিসম্রাট সুলেখক মহান লেখক তোকে
নিয়ে মনের ভালোবাসার ভালো লাগার কথা কত যে লিখেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
-(অভিজ্ঞানম শকুন্তলম) মহাকবি কালিদাস-
" মৌমাছিদের ঠোঁটের ছোঁয়ার কম্পিত ওই শিরিশ ফুল
তুলে নিয়ে সুন্দরীরা বাঁধছে দেখো মাথার চুল।"
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -
"রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে"
কবি সম্রাট মাইকেল মধুসূদন দত্ত-
" কখন দখিন হতে কে দিল দুয়ার খুলি
চমকে উঠিল জাগি চামেলি নয়ন মেলি
বকুল পেয়েছে ছাড়া করবি দিয়েছে সাড়া
শিরীষ শিহরি উঠে দূর হতে কারে দেখি-"
প্রচলিত কবিতা-
" শিউলি তলায় ভোর বেলায়
কুসুম কুড়ায় পল্লীবালা
শেফালী পুলকে ঝরে পড়ে মুখে
খোঁপাতে চিবুকে আবেশে উতলা।"
"ম্লান হয়ে এলো কন্ঠে মন্দার মালিকা"
প্রচলিত গান -
"ও পলাশ ও শিমুল কেন এমন করে রাঙালে
জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙ্গালে"
"ও শিমুল বন দাও রাঙিয়ে মন
কৃষ্ণচূড়া দোপাটি আর পলাশ দিলো ডাক
মধুর লোভে ভিড় জমালো মৌ পিয়াসে ওলির ঝাঁক'
"আমি রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধ বিলিয়ে যাই"
"এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম চললাম"
বাংলার কবি নজরুল-
" ঝিঙে ফুল ঝিঙে ফুল
সবুজ পাতার দেশে
ফিরোজিয়া ফিঙ্গে কুল
ঝিঙে ফুল।। "
ফুল, এমনই কতশত গান কবিতার ডালি সাজিয়ে পৃথিবীর মানুষ তোকে আপন করে
রেখেছে। তোর রং বাহারের জলুসে মন খুশি মানুষ। মন খুশি স্বর্গের দেবতা
সবাই। প্রকৃতির সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী সকল মানুষ ভগবানের পুজো করে তোকে
দুহাতের মাঝে রেখে। তোর শুদ্ধ পবিত্রতার ছোঁয়ায় মানুষ ক্ষণিকের জন্য
পবিত্র মনে ভগবানের আরাধনা করে, বন্দনা করে-
পুষ্পে পুষ্পে মহা পুষ্পে সু পুষ্পে পুস্পু সম্ভবে.......
ফুল, তুই কত সুন্দর, তোর মধ্যে অবিলতা নেই, কুটিলতা নেই, দ্বেষ হিংসা
নেই। আপন খেয়ালে প্রকৃতির সবাইকে, মানুষকে আনন্দ দিয়ে বেড়াস। তুই এত
ভালো যে ভগবান ও তোকে খু-উ-ব আদর করে।
ফুল, মানুষ কেন তোর মত হলো না!
