স্ত্রৈন
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়,
নতুন দিল্লি
স্ত্রীঃ একি ! সকাল বেলার জল-খাবার না খেয়ে তুমি কাঁদছো যে ? কি ব্যাপার
?
[স্বামী অবোধ শিশুর ন্যায় স্ত্রীর মুখপানে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে
থাকে ।]
স্ত্রীঃ কাঁদার কারণটা কি ? বুকে ব্যথা হচ্ছে ? না বললে বুঝবো কেমন করে ?
এতদিন জানতাম ইতালীয়ান স্বামীরা
পৃথিবী বিখ্যাত কাঁদুনে হয় । এখন তো দেখছি তুমি তাঁদেরও হার মানিয়েছ ।
স্বামীঃ সাধনের বৌটা দু’দিনের জ্বরে আজ সকালে হঠাৎ মারা গিয়েছে ।
স্ত্রীঃ ও! তাই তোমার চোখে জল ? পরের বৌয়ের জন্যে তোমার এত দরদ ? বলি আমি
ম’লে এমন করে কাঁদবে তো ?
স্বামীঃ ছিঃ আমার বুঝি তখন লজ্জা করবে না ? পাছে লোকে যদি বলে - আমি
স্ত্রৈন !
স্ত্রীঃ বুঝেছি তুমি জাতে মাতাল তালে ঠিক । ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছিল
এতদিন ?
ভালোবাসা
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়,
নতুন দিল্লি
‘গ্রেট মেন থিঙ্ক এলাইক’ বলে ইংরেজিতে বহুল প্রচলিত একটি আপ্ত বাক্য আছে
। কথাটা সকলেরই জানা । তবে বিশেষ করে বিবাহিতা নারীদের সম্পর্কে কে কি
মন্তব্য করেছেন আমার অবশ্য তা জানা নেই । মাঝেমধ্যে তাই সন্দেহ হয় তাঁরা
সকলেই কি একই ভাবনায় জাড়িত ? উদাহরণ স্বরূপ আমার স্ত্রীর কথাই ধরা যাক !
আমার স্ত্রীর অন্তর্গভীরে আত্মবিশ্বাস নামক বস্তুটির বড়ই অভাব-- যতদূর
আমার ধারণা । কারণ বিবাহিত জীবনের পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও
তাঁর একটাই প্রশ্ন – আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি আমাকে ভালোবাসো ?
--- এই অবান্তর প্রশ্নবাণে আমি প্রায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছি বিগত
পঞ্চবিংশতি বছর যাবৎ । তাঁর সন্দেহ নিরসন করতে আমি অপারগ । প্রতি বছর
তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে একটি সোনার আংটি উপহার দেওয়ার পরেও তাঁর একই প্রশ্ন
– আচ্ছা বলো তো তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো ?
একবার বলেই ফেলেছিলাম – বিশ্বাস করো একেবারে পঞ্চম মুঘোল সম্রাট
সাজাহানের মতো ।
-- তাহলে তুমি কি আমার মৃত্যুর পরে তাজমহল গড়তে চাও ? স্ত্রীর কৌতূহলী
প্রশ্ন ।
আমি তাঁকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে বলেছিলাম-- না গো ! বামন হয়ে আমার চাঁদ ধরার
ইচ্ছে একেবারেই নেই । ওই আশা দূরাশা । ওটা আমার সাধ্যের বাইরে ।
-- তাহলে ?
-- আমি বড়জোর তোমার মৃত্যুর পর আমার স্মৃতির মনিকোঠায় তোমাকে চির অমর করে
রাখার জন্যে হয়তো দুঃখ শোক নিবারণের অছিলায় দ্বিতীয় বার কোন সুন্দরী
মহিলার পানিপ্রার্থী হতে পারি । যেমনটি সম্রাট সাজাহান বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হয়েছিলেন বেগম মমতাজের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই । কারণ কথায় আছে
“দৈবায়ত্তম্ কূলে জন্ম মদায়ত্তম্ পৌরুষম্” । আমার এইটুকুই মাত্র ক্ষমতা ।
বলাবাহুল্য, ভবিষ্যতে ভালোবাসা সম্পর্কে আমাকে আর কোন প্রশ্নের জবাবদিহি
করতে হয়নি ।।