আমরা তোমায় ভুলব না
(নারায়ণ দেবনাথ স্মরণে)

চন্দ্রমা মুখার্জী,

সমর পল্লী, কলকাতা

“হ্যালো, হ্যালো, মাইক টেস্টিং।“ – সেই তখন থেকে একভাবে মাইকে চেঁচিয়ে যাচ্ছে বাঁটুল। “আজকে এতো বড় একটা অনুষ্ঠান, আর এদিকে বিচ্ছুদুটোর পাত্তা নেই। কোনদিকে আছে কে জানে।“ – বিড়বিড় করে যাচ্ছে বাঁটুল। “ঐই ভোঁদা যাচ্ছে না, ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করি। এই ভোঁদা, শোন তো এদিকে একবার।“ – জোরে হাঁকল বাঁটুল। হাঁক শুনে ভোঁদা এগিয়ে এল – “কি হয়েছে বাঁটুলদা?”

কিন্তু ঐদিকে বাঁটুলের হাঁকে যা হওয়ার হয়ে গেছে। মাইকে যা জোরে চেঁচিয়েছে যে, সামনের বসার জায়গার মাথার ওপর একটা পাখা খুলে পড়ে গেছে। আর পড়বি তো পড় সোজা বাহাদুর বেড়ালের মাথায়। “আউফ্‌স্‌। এই বাঁটুল তুমি মাইক থেকে সরে যাও তো। তুমি চুপচাপ এসে দর্শকাসনে বসে পড়ো। আঃ, আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিল একেবারে।“ – বাহাদুর বেড়াল চেঁচিয়ে উঠল।

নন্টে, ফন্টে দৌড়ে এল আরও কয়েকজনকে নিয়ে। বাহাদুরের শুশ্রূষা আর পাখাটা ঠিকমতো ফিট করতে। এতোকিছু দেখে ভোঁদা ভুলেই গিয়েছিল যে, বাঁটুল কেন ওকে ডেকেছে। এবার মনে পড়ল। বলল, “বলো, বাঁটুলদা। কি বলবে।“ “হ্যাঁরে, বিচ্ছু দুটো কোথায় দেখেছিস?” – বাঁটুল বলল।

“আরে, বাঁটুল চিন্তা করো না। ওরা হাঁদার সাথে ওদিকে আছে। আমিও ওদিক থেকেই আসছি।“ – বলতে বলতে কেল্টুর আগমন। “সেইজন্যই তো ভয় গো কেল্টুদা। তোমরা চারজন একজায়গায় থাকা মানেই তো একটা কিছু ঘটবে গো।“ – ফন্টে মিচকে হেসে বলল। কেল্টু শুনেই লাফাতে লাগল, “কি ঘটবে শুনি?” “আরে কেল্টুদা, বাদ দাও তো ফন্টের কথা। এখুনি অনুষ্ঠান শুরু হবে, তুমি গিয়ে বসে পড়ো।“ – নন্টে বলল।

সবাই যে যার মতো বসে পড়ল। অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রধান বক্তা সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার আর সভাপতি হাঁদার পিসেমশাই। হাঁদা শুরু করল, “আজকে আমরা সবাই এই স্মরণসভায় মিলিত হয়েছি। প্রথমেই স্যার কিছু বলবেন। তারপর পিসেমশাই বলবেন। দর্শকাসনে যারা বসে আছেন তারাও এক এক করে নিজেদের বক্তব্য রাখতে পারবেন, মঞ্চে এসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারবেন।“

সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার শুরু করলেন, “আজ আমরা সবাই এখানে একটা স্মরণসভার আয়োজন করেছি। মহামান্য শ্রীযুক্ত নারায়ণ দেবনাথ মহাশয় গত ১৮ই জানুয়ারী পরলোকগমন করেছেন। ওঁনার সুদীর্ঘ জীবনে উনি অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। আমরা সবাই ওঁনার হাত ধরেই পরিচিতি পেয়েছি। তাই ওঁনার কাছে আমরা চিরকাল ঋণী থাকব।“

এবার পিসেমশাই বলতে এলেন। “ওঁনার জন্যই আজকে সবাই আমাদের চেনে, আমাদের এতো ভালবাসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের একইরকম ভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে। তাই আমাদের দায়িত্ব আমাদের মধ্যে দিয়েই ওঁনাকে জীবিত রাখা।“

এরপর এক এক করে হাঁদা – ভোঁদা, বাঁটুল ও বিচ্ছুদুটো, নন্টে – ফন্টে আর কেল্টু, বাহাদুর বেড়াল, শুঁটকি – মুটকি, পটলচাঁদ দি ম্যাজিশিয়ান, ইন্দ্রজিৎ রায়, কৌশিক রায়, ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু ও অন্যান্যরা সবাই নারায়ণ দেবনাথকে নিয়ে কিছু কিছু বলল। অনুষ্ঠান শেষ হল।

সকাল হয়ে গেছে। মুখে রোদ লেগে মিষ্টির ঘুম ভেঙে গেল। ভোরের স্বপ্নটা খুব সুন্দর ছিল। স্রষ্টার জন্য সৃষ্টিদের স্মরণসভা। আগের দিন নারায়ণ দেবনাথ প্রয়াত হয়েছেন। এই খবরটায় মিষ্টির মনটা ভারাক্রান্ত ছিল। যেন তার নিজের খুব কাছের কেউ চলে গেছে। আজকের ভোরের স্বপ্নটা মনটা খানিকটা হালকা করে দিল। সত্যি, মিষ্টি আর বাংলার অন্য ছেলেমেয়েরা, সমস্ত বাঙালি কোনদিন নারায়ণ দেবনাথ এবং তার সৃষ্টিদেরকে ভুলবে না।